সার্চ ইঞ্জিন হলো এমন একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যা ইন্টারনেটে বিশাল পরিমাণ তথ্যের মধ্য থেকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করে দেয়। এটাকে অনলাইন লাইব্রেরিও বলা যেতে পারে। যেমন আপনি যখন গুগল, ইয়াহু বা বিং-এ কোনো কিছু টাইপ করে সার্চ বা অনুসন্ধান করেন, তখন সেই সার্চ ইঞ্জিনটি আপনার দেওয়া শব্দগুলোর সাথে মিলিয়ে ইন্টারনেটে থাকা কোটি কোটি ওয়েব পেজের মধ্য থেকে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ফলাফলগুলো আপনাকে দেখায়। ধরুন আপনি (পাঠক বিডি) লিখে গুগলে সার্চ করলেন। এর ফলে গুগল আপনাকে পাঠক বিডির সাথে সামঞ্জস্য সব তথ্য আপনার সামনে দেখাবে।
সার্চ ইঞ্জিন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- তথ্য খুঁজে পাওয়া সহজ: ইন্টারনেটে বিশাল পরিমাণ তথ্য থাকার কারণে সার্চ ইঞ্জিন ছাড়া প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হতো। কিন্তু বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিন আমাদের যেকোনে তথ্য সহজেই খুঁজে পেতে সহায়তা করে। কাঙ্খিত বিষয়টি এখন সার্চ করলেই সামনে চলে আসে।
- সময় বাঁচায়: সার্চ ইঞ্জিন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করে দেয়। শুধু সেকেন্ড নয় মিলি সেকেন্ডই তথ্য খুঁজে দেয় সার্চ ইঞ্জিন গুলো। কল্পনার বাইরে যে, আপনার কত বেশি সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছে।
- জ্ঞান অর্জন: সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে আপনি যে কোনো বিষয়ে নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। সকল অজানা বিষয় সার্চ করে জেনে নিতে পারেন।
উদাহরণ:
ধরুন আপনি “ঢাকা শহর” সম্পর্কে জানতে চান। আপনি যখন গুগলে “ঢাকা শহর” টাইপ করে সার্চ করবেন, তখন গুগল ইনডেক্সে “ঢাকা” এবং “শহর” শব্দগুলো খুঁজবে এবং এই দুই শব্দ যেসব ওয়েব পেজে একসাথে আছে সেগুলোকে আপনাকে দেখাবে।
কিছু জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন:
১. গুগল (Google)
গুগল হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন। গুগল ইন্টারনেটের প্রায় সমস্ত ওয়েবসাইট ইনডেক্স করে রেখেছে। এর অত্যাধুনিক অ্যালগোরিদমের কারণে এটি সবচেয়ে নির্ভুল ফলাফল দেয়। গুগল শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, এটি অনেক অন্যান্য সার্ভিসও প্রদান করে, যেমন জিমেইল, ইউটিউব, গুগল ম্যাপ ইত্যাদি।
২. বিং (Bing)
মাইক্রোসফটের বিং হলো গুগলের পরেই দ্বিতীয় জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। বিং এর ইন্টারফেস খুবই ব্যবহারকারীবান্ধব এবং এটি বিভিন্ন ধরনের ভিজুয়াল সার্চ অপশন দেয়। গুগলের মতো অনেক ওয়েবসাইট বিং সার্চ ইঞ্জিনে যুক্ত রয়েছে।
৩. ইয়াহু (Yahoo)
একসময় ইন্টারনেটের রাজা বলা হতো ইয়াহুকে। যদিও এখন এর জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই, তবুও এটি একটি জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন।
৪. ডাকডাকগো (DuckDuckGo)
যারা তাদের গোপনীয়তা নিয়ে সচেতন, তাদের জন্য ডাকডাকগো একটি ভালো বিকল্প। এটি ব্যবহারকারীর ডাটা ট্র্যাক করে না। সুতরাং ডাটা ট্রাকিং ছাড়া এই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করতে পারবেন।
৫. স্টারসি (Startpage)
স্টারসিও ডাকডাকগোর মতোই একটি গোপনীয়তা-কেন্দ্রিক সার্চ ইঞ্জিন। এটি গুগলের সার্চ রেজাল্ট ব্যবহার করে, কিন্তু ব্যবহারকারীর IP অ্যাড্রেস লুকিয়ে রাখে।
কোন সার্চ ইঞ্জিনটি আপনার জন্য সেরা?
এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার প্রয়োজনের উপর। যদি আপনি সবচেয়ে নির্ভুল ফলাফল চান, তাহলে গুগল আপনার জন্য সেরা। তবে গুগলে প্রায় সকল ওয়েবসাইট ইনডেক্স থাকার কারণে কিছু কম মানের ওয়েবসাইট রয়েছে যারা ভুল তথ্য প্রদান করে। এজন্য তথ্য গ্রুনের আগে যাচাই করা জরুরী। যদি আপনি গোপনীয়তার ব্যাপারে সচেতন হন, তাহলে ডাকডাকগো বা স্টারসি ভালো বিকল্প হতে পারে।
সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?
আপনি যখন গুগল বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু খুঁজেন, তখন সেটা একটা জাদুর মতো মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে এর পেছনে একটা বিশাল প্রক্রিয়া কাজ করে। আসুন জেনে নিই সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে:
১. ক্রলিং:
সহজ কথায় বলতে গেলে, ক্রলিং হলো ইন্টারনেটের বিশাল জালে ঘুরে বেড়ানোর একটি প্রক্রিয়া। সার্চ ইঞ্জিনগুলো (যেমন গুগল, বাংলা সার্চ) ইন্টারনেটের সব ওয়েবসাইট, ব্লগ, এবং অন্যান্য অনলাইন কনটেন্টগুলোকে খুঁজে বের করে। এই কাজটাই হলো ক্রলিং। এই কাজটি করার জন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো বিশেষ কিছু প্রোগ্রাম ব্যবহার করে, যাদেরকে ক্রলার বলা হয়।
- উদ্দেশ্য: ক্রলিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো ইন্টারনেটের সমস্ত তথ্যকে একটি বড় ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা। যাতে আপনি যখন কোনো কিছু সার্চ করেন, তখন সার্চ ইঞ্জিন সেই ডাটাবেজ থেকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করে দিতে পারে।
- ওয়েব পৃষ্ঠা খুঁজে বের করা: সার্চ ইঞ্জিনের কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলোকে বলা হয় “স্পাইডার” বা “ক্রলার”। এই স্পাইডারগুলো ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়ায় এবং সব ওয়েব পৃষ্ঠা খুঁজে বের করে।
- ইনডেক্স তৈরি: খুঁজে পাওয়া সব তথ্যগুলোকে একটা বড় ডাটাবেজে সংরক্ষণ করে। এই ডাটাবেজকেই ইনডেক্স বলা হয়।
২. ইনডেক্সিং:
সহজ কথায় বলতে গেলে, ইনডেক্সিং হলো একটি বিশাল লাইব্রেরির বইগুলোকে সাজানোর মতো। যেমন, একটা লাইব্রেরিতে হাজার হাজার বই থাকে। যাতে আপনি খুব সহজে যে কোনো বই খুঁজে পান, সেগুলো বিষয়ভিত্তিক বা শিরোনাম অনুযায়ী সাজানো থাকে। একইভাবে, ইন্টারনেটেও কোটি কোটি ওয়েব পেজ আছে। যাতে সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই বিশাল পরিমাণ তথ্যের মধ্য থেকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য খুব দ্রুত খুঁজে বের করে দিতে পারে, সেগুলোকে একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সাজানো থাকে। এই সাজানোর প্রক্রিয়াকেই ইনডেক্সিং বলে।
আরও বিস্তারিতভাবে বললে:
-
- সার্চ ইঞ্জিনের কাজ: যখন আপনি গুগল বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু সার্চ করেন, তখন সেই সার্চ ইঞ্জিন আপনার দেওয়া শব্দগুলোকে তার ইনডেক্সের সাথে মিলিয়ে দেখে এবং সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ফলাফলগুলো আপনাকে দেখায়।
- ইনডেক্স: ইনডেক্স হলো একটি বিশাল ডাটাবেজ, যেখানে ইন্টারনেটের সব ওয়েব পেজের তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে। এই ডাটাবেজে প্রতিটি ওয়েব পেজের শিরোনাম, কীওয়ার্ড, লিঙ্ক এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে।
- ইনডেক্সিংয়ের প্রক্রিয়া: ক্রলাররা ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্যগুলোকে ইনডেক্সে সাজিয়ে রাখে। এই সাজানোর কাজটিকে ইনডেক্সিং বলে।
৩. সার্চ এবং র্যাঙ্কিং:
আপনি যখন কোনো সার্চ ইঞ্জিনে (যেমন গুগল) কোনো কিছু খুঁজেন, তখন সেখানে দুটি মূল প্রক্রিয়া কাজ করে: সার্চ এবং র্যাঙ্কিং।
সার্চ কি?
- আপনার প্রশ্ন খুঁজে বের করা: যখন আপনি কোনো কিছু টাইপ করে সার্চ বাটনে ক্লিক করেন, তখন সার্চ ইঞ্জিন আপনার দেওয়া শব্দগুলোকে খুঁজে বের করে।
- ইনডেক্সের সাথে মিলানো: আপনার সার্চ করা শব্দকে ইনডেক্সের সাথে মিলিয়ে দেখে। ইনডেক্স হলো ইন্টারনেটের সব ওয়েব পেজের একটি বিশাল তালিকা।
- মিল পাওয়া পেজ: যেসব ওয়েব পেজে আপনার দেওয়া শব্দগুলো পাওয়া যায়, সেই সব পেজগুলোকে একটি তালিকা আকারে দেখায়।
র্যাঙ্কিং কি?
- সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ফলাফল: সার্চ ইঞ্জিনে হাজার হাজার ওয়েব পেজ মিলতে পারে। তখন সার্চ ইঞ্জিন এই সব পেজগুলোকে গুরুত্ব অনুযায়ী একটি তালিকায় সাজায়।
- কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর: সার্চ ইঞ্জিন বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করে, যেমন:
- কীওয়ার্ড ম্যাচ: আপনার দেওয়া শব্দগুলো ওয়েব পেজে কতবার এবং কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে।
- ওয়েব পেজের গুণমান: ওয়েব পেজটি কতটা ভালোভাবে তৈরি করা হয়েছে, কনটেন্ট কতটা কোয়ালিটিফুল ইত্যাদি।
- অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে লিঙ্ক: অন্যান্য জনপ্রিয় ওয়েবসাইট থেকে এই ওয়েব পেজে কতগুলো লিঙ্ক আছে।
- ইউজার এক্সপেরিয়েন্স: ওয়েব পেজে ভিজিটররা কতক্ষণ থাকে, কোন কোন জায়গায় ক্লিক করে ইত্যাদি।
- সেরা ফলাফল উপরে: সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক এবং গুণমান সম্পন্ন ওয়েব পেজগুলো এই তালিকার উপরে থাকে। টপ র্যাঙ্কিং ধরে রাখার জন্য অবশ্য ভালো মানের কনটেন্ট এবং উন্নত পেইজ তৈরি করা জরুরী।
সহজ কথায় বলতে গেলে:
-
- সার্চ: আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা।
- র্যাঙ্কিং: পাওয়া উত্তরগুলোকে গুরুত্ব অনুযায়ী সাজানো।
এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং ক্রমাগত আপডেট হচ্ছে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো নতুন নতুন অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে আরো ভালো ফলাফল দেওয়ার চেষ্টা করে।