শরীরের পাশাপাশি মন ভালো রাখতে জেনে নিন মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়। কারণ একমাত্র মানসিকভাবে ভালো থাকলেই চারপাশের সবকিছু সুন্দর মনে হয় এবং জীবনযাত্রা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।
কিন্তু আমরা অনেকেই শারীরিক সুস্থতাকে প্রাধান্য দিলেও মানসিক সুস্থতা নিয়ে তেমন বেশি চিন্তিত নই। জীবনের কঠিন মুহূর্তে হাসিখুশি থাকা, প্রকৃতিতে সময় কাটানো, শান্ত পরিবেশ হাঁটা, পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটানো ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে প্রতিদিন নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করতে হবে। সবকিছুর উপরে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায় সম্পর্কে আমরা নিচে আলোচনা করব এবং আপনারা আপনাদের প্রাত্যহিক জীবনে এগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অনেক উপায় রয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা ১২টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনার মন ও শরীরকে সুস্থ রাখবে।
১) নিজের প্রতি সচেতন থাকুন
মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই নিজের প্রতি সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। নিজের জন্য আলাদা করে সময় বের করুন এবং নিজের ভালোলাগা এবং খারাপ লাগা গুলোকে প্রাধান্য দিন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত আত্ম সচেতনতা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।
তাই নিজেকে ভালো করে জানুন এবং কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বা কাজ করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন “এটা কি ঠিক?” “আমি কি পারবো?” নিজের কাছে যেকোনো কাজ করার পূর্বে প্রশ্ন করলেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার মনোবল কতটুকু।
২) তুচ্ছ বিষয়ের চিন্তা ভাবনা করা পরিহার করুন
আমরা অনেকেই আছি যারা তুচ্ছ বিষয় চিন্তা ভাবনা করতে পছন্দ করি। যে সব বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার আদৌ কোন প্রয়োজন নাই, সেসব বিষয়ে চিন্তাভাবনা করলে শরীর ক্রমশ ও খারাপ হতে থাকে সেই সাথে মানসিক স্বাস্থ্য। অনেকে তার জীবনের অধিকাংশ সময়ে তুচ্ছ বিষয় চিন্তা ভাবনা করে পার করে দেন।
কিন্তু ছোটখাটো বিষয়ে দুশ্চিন্তা করে তাতে সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নে তেমন কোন লাভ হয় না। তাই আগে নির্ধারণ করুন কোন বিষয়ে চিন্তা করা উচিত এবং কোন বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা একদমই উচিত নয়। যে সব বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত নয় সেসব বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন।
৩) নিয়মিত শরীর চর্চা করুন
শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শরীর চর্চার কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় ধরে হাঁটাহাঁটি করা, যোগাসন করা বা দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় জিমে অতিবাহিত করা, ইত্যাদি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
লেখালেখি করে ইনকাম করার বিভিন্ন উপায় ২০২৪
কারণ নিয়মিত ব্যায়াম বা যোগাসন করলে শরীর থেকে প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশমকারী এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটতে থাকে। এতে করে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা কমার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ও উন্নতি ঘটে।
৪) স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন
শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। যখন আপনার মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণ গ্রহণ করতে পারে কখন মস্তিষ্ক নিচ থেকেই মানসিক চাপ মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকে। এক্ষেত্রে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫) টেকনোলজি ব্যবহারে সতর্ক হউন
বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ হওয়ায় আমাদের বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেটের পেছনে অতিবাহিত করতে হয়। কিন্তু এটি আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আপনি যদি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান তাহলে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় টেকনোলজি ব্যবহারে ব্যয় করুন। এবং বাকিটা সময় প্রাকৃতিক পরিবেশে কাটানোর চেষ্টা করুন। স্ক্রিনে সময় কাটানোর পরে প্রাকৃতিক পরিবেশের সময় কাটালে কিছুটা ব্যালেন্স হয়ে যায়। ফলে মানসিক উদ্বেগ কিছুটা হলেও কমে আসে।
৬) যা করতে ভালোবাসেন তাই করুন
যখন মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে না তখন যে কাজগুলো করতে আপনার ভালো লাগে সেগুলোই করুন এবং বোরিং অ্যাক্টিভিটিজ গুলো এড়িয়ে চলুন। এক্ষেত্রে আপনি মাসে অন্তত একবার কোথাও ঘুরে আসতে পারেন অথবা প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ছবি আঁকতে পারেন, গান গাইতে পারেন। এছাড়া আপনি আপনার যেকোন প্রিয় টিভি শো দেখতে পারেন এবং যা করতে ভালো লাগে তাই করতে পারেন। এতে করে মানুষের স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি হবে।
৭) সকল ধরনের মাদকদ্রব্য এগিয়ে চলুন
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি আনতে চাইলে সকল ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। যারা দীর্ঘ মেয়াদে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করছেন তাদের প্রাকৃতিকভাবে আচরণে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসে। এতে করে মেজাজের পরিবর্তন, উদ্বেগ, হতাশা ইত্যাদি পরিবর্তন আসতে পারে। এসব সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে পরিত্রাণের জন্য মাদক নিরাময় কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা নিজ থেকে মাদক দ্রব্যের ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে দিন।
৮) সব সময় সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন
যে সব ব্যক্তি সবসময় সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য আপনা আপনিই ভালো থাকে। আপনি যদি দীর্ঘক্ষন নির্জীব অবস্থায় থাকেন তাহলে অনেক তুচ্ছ বিষয় চিন্তা ভাবনা করতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন।
এতে করে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়ে যাবে। তাই সবসময় কোনো না কোনো ছোট বড় কাজ করার চেষ্টা করুন। কাজের মধ্যে থাকলে তুচ্ছ বিষয়ের মানুষ আকৃষ্ট হয় না এবং মানসিক চাপ প্রাকৃতিকভাবে কমে আসে। সব সময় সক্রিয় থাকলে মানুষ শারীরিকভাবেও ফিট থাকে।
৯) ঘুম নিশ্চিত করুন
রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং মনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনি যে পরিবেশে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন আপনার বেডরুমে ঠিক তেমন একটি পরিবেশ রাখার চেষ্টা করুন।
রাতে অন্তত ৭-৮ ঘন্টা একটি ভালো ঘুম নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন। তবে এক্ষেত্রে ঘুমের সময়সূচী নির্ধারণ করা জরুরী। অর্থাৎ প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় এর মধ্যে অন্যতম।
১০) কৃতজ্ঞ থাকতে শিখুন
সারাদিন আপনি কি কি কাজ করেছেন দিনশেষে তার হিসাব করুন এবং যেকোনো ভালো কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞ কৃতজ্ঞ থাকতে শিখুন। যা কিছু পাননি তার জন্য মন খারাপ না করে যা কিছু পেয়েছেন তার জন্য সব সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় এর মধ্যে কৃতজ্ঞ থাকতে শেখা অন্যতম একটি পন্থা।
১১) প্রিয়জনের সাথে সময় কাটান
মন খারাপ থাকলে ঘরবন্দি না থেকে প্রিয়জনের সাথে ঘুরতে বের হতে পারেন এবং যতটা সম্ভব প্রিয়জন এর সাথে সময় কাটাতে পারেন। বন্ধুবান্ধব, পরিবার অথবা কাছের মানুষের সাথে সময় কাটালে মানুষ কিছুটা সময়ের জন্য মানসিক উদ্বেগ ভুলে থাকতে পারে। প্রিয় মানুষকে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়েও মানুষের মানসিক অশান্তি দূর হয়।
১২) ক্ষমা করতে শিখুন
আপনার সাথে কোন কিছু খারাপ হলে তা মনে পুষে রাখবেন না। খারাপ বিষয়গুলো মনে পুষে রাখলে বা যে আপনার সাথে খারাপ করেছে তার জন্য রাগ পুষে রাখলে মানসিক স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হতে থাকবে। তাই ক্ষমা করতে শিখুন এবং যাকে ক্ষমা করেছেন তার সাথে হাসিমুখে কথা বললে নিজের মনে মানসিক প্রশান্তি পাবেন।
উপসংহার
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ১২ টি মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যারা মানসিকভাবে বিভিন্ন অশান্তির মধ্যে আছেন এবং সুস্থ হওয়ার বিভিন্ন উপায় খুঁজছেন আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। মনে রাখবেন শারীরিক সুস্থতা ফেরত পাওয়া গেলেও মানসিক সুস্থতা ফেরত পেতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই হতাশা কাটানোর জন্য নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং প্রতিদিন নিজের জন্য আলাদা কিছু সময় বের করে প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে পারেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
নিজেকে ভালো রাখার উপায় কি?
ব্যায়াম করুন, ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন, জীবনের লক্ষ্য তৈরি করুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মন ভালো রাখার জন্য আমাদের করণীয় কী?
পরিমিত পরিমাণে ঘুমান, মন খুলে হাসুন, প্রিয়জনের সাথে সময় কাটান এবং ঘুরতে বের হন।
কিভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায়?
অলসতা পরিহার করুন, মাদকদ্রব্য পরিহার করুন, মানসিক চাপ কমান, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।